ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ :
ঘাটাইলে স্বর্ণকারের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭ টাঙ্গাইলে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইলে প্রতারক হাফিজউদ্দিন হাবিব সরকার গ্রেফতার বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক অভিযোগ: টাঙ্গাইলে দুদকের গণশুনানি টাঙ্গাইলে হত্যা মামলার আসামী গ্রেপ্তার বিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা: শতাধিক অভিভাবক নিয়ে সংবাদের তদন্ত করার অভিযোগ স্ত্রীর প্রতারণার বর্ণনা দিলেন কালিহাতীর শওকত টাঙ্গাইলে ৪৯ কেজি গাঁজাসহ আটক ৩ মির্জাপুরে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা টাঙ্গাইল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গোপনে পরীক্ষা নেয়া শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ
শিরোনাম :
ঘাটাইলে স্বর্ণকারের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭ টাঙ্গাইলে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত টাঙ্গাইলে প্রতারক হাফিজউদ্দিন হাবিব সরকার গ্রেফতার বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে দেড় শতাধিক অভিযোগ: টাঙ্গাইলে দুদকের গণশুনানি টাঙ্গাইলে হত্যা মামলার আসামী গ্রেপ্তার বিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা: শতাধিক অভিভাবক নিয়ে সংবাদের তদন্ত করার অভিযোগ স্ত্রীর প্রতারণার বর্ণনা দিলেন কালিহাতীর শওকত টাঙ্গাইলে ৪৯ কেজি গাঁজাসহ আটক ৩ মির্জাপুরে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা টাঙ্গাইল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গোপনে পরীক্ষা নেয়া শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ

চায়না দুয়ারি জালে বিপন্ন মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য

  • ডেস্ক প্রবাহ
  • আপলোডের সময় : ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
  • ৫০২৩ Time View

নদনদী ও প্রাকৃতিক জলাশয়ের মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য নানা কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এর মধ্যে একধরনের চায়না রিং জালের ব্যবহার দেশীয় মাছ বিলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অঞ্চলভেদে এটি চায়না দুয়ারি, ম্যাজিক জাল, রিং জাল নামেও পরিচিত। ব্যবহারবিধি ও প্রাচুর্য সহজ হওয়ায় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় জেলেদের পাশাপাশি মৌসুমি মাছ শিকারি এবং সাধারণ মানুষও এর ব্যবহার করেছে। অবৈধ এই জাল ধ্বংসে প্রশাসনিক অভিযান, নজরদারি এবং সচেতনতা বৃদ্ধির উৎসাহী কার্যক্রম যথেষ্ট অপ্রতুল।

জানা যায়, নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি রিং বিশিষ্ট জাল সাধারণত এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতা ও ৬০ থেকে ৯০ ফুট দৈর্ঘ্যের এবং ক্ষুদ্র ফাঁস বিশিষ্ট হয়। এটি লোহার রডের রিং দিয়ে খোপ আকারে বাক্স তৈরি করে চারপাশ সূক্ষ্ম জাল দিয়ে ঘেরাও করে তৈরি।

এ জালে অসংখ্য প্রবেশমুখ থাকায় দুদিক থেকেই মাছ ঢুকতে পারে। জালের ফাঁস ছোট হওয়ায় ছোট কোনো মাছই এর থেকে রেহাই পায় না।

ঘাটাইলে চায়না দুয়ারি রিং জালের ফাঁদে উজাড় হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ যেমন পুঁটি, খলিশা, টাকি, চিংড়ি, ট্যাংরা, শিং, মাগুর, চেলা, ডানকিনা, মলা, ঢেলা, বৈরালী, কাজলী, পাবদা, শোল ইত্যাদি।

এতে ছোট পোনা আটকা পড়ে যা ফেলে দেন শিকারিরা। বিশেষ করে এটাতে ডিমওয়ালা মাছ ধরা পড়ায় স্বাভাবিক প্রজনন, বংশ বিস্তার ও বৃদ্ধি হুমকিতে পড়েছে।

এ ছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী বিভিন্ন জলজপ্রাণী যেমন কাঁকড়া, সাপ, কুঁচিয়া, ব্যাঙ, ঝিনুক, শামুক, পোকামাকড়, কচ্ছপ, অণুজীব ইত্যাদির জীবনযাত্রাও এতে তুমুল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

আকার ও মানভেদে একটি চায়না জালের দাম দুই থেকে দশ হাজার টাকা। কম দাম ও সহজলভ্যতার কারণে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে ঘাটাইলের গ্রামাঞ্চলে।

ঘাটাইল উপজেলার হামিদপুর, সাগরদিঘী, গারো বাজার, ধলাপাড়া, পাকুটিয়াসহ বিভিন্ন হাট বাজারে অবাধে বিক্রি এ জালের। এমনকি বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও দূর-দূরান্ত থেকে অনায়াসে গোপনে এই জাল ঢুকে পড়ছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে।

এ দিকে টোক নদী, বংশাই নদী, চাপড়া বিল, দেওপাড়ার গোয়াপচা, গজারিয়া ও রাণাদহ বিল, কামারচালার মাইছা বিল, ধলাপাড়ার কালিয়ান বিল, রসুলপুরের ধলি ও আঠারচূড়া বিল, দিঘলকান্দির শেখশিমুল বিল, চিতাই খাল, নাগবাড়ি বিল, চ্যাংটা খাল, ভেকি টোকের খাল, গৌরাঙ্গী বিল, নেদার বিল, সংগ্রামপুরের মনপুরা এলাকায় শত শত চায়না জাল ব্যবহার করে প্রাকৃতিক মাছ ও জীববৈচিত্র্য অবাধে ধ্বংস করছে।

ঘাটাইল উপজেলার লোকের পাড়া গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের আমিষের চাহিদা পূরণে মাছই একমাত্র উপাদান।

একটা সময়ে নদীনালা, খালবিল, হাওর-বাঁওড়ে দেশীয় মাছের প্রাচুর্য ছিল। চায়না জালের কারণে বাঙালির জৌলুস হারিয়ে যেতে বসেছে।

ধলাপাড়া গ্রামের আজমত আলী বলেন, চায়না জালের প্রভাবে প্রাকৃতিক মাছের প্রাচুর্য কমছে। বিশেষ করে পানি বৃদ্ধি ও মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ এই চায়না জালে নিধন হচ্ছে।

এতে ক্রমেই মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে জলাশয়। এ সব জাল বন্ধ না হলে মৎস্য ভান্ডারে বিপর্যয় নেমে আসার শঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা খাদিজা খাতুন জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও নজরদারি সত্ত্বেও কিছু অসাধু মানুষ অজ্ঞতাবশত এ সব অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছের প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য বাধাগ্রস্ত এবং ধ্বংস করছে।

খোঁজ খবর নিয়ে অবৈধ এই জাল ব্যবহারের প্রকোপ আরও বাড়লে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় খবর

ঘাটাইলে স্বর্ণকারের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭

চায়না দুয়ারি জালে বিপন্ন মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য

আপলোডের সময় : ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

নদনদী ও প্রাকৃতিক জলাশয়ের মৎস্য ও জীববৈচিত্র্য নানা কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এর মধ্যে একধরনের চায়না রিং জালের ব্যবহার দেশীয় মাছ বিলুপ্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অঞ্চলভেদে এটি চায়না দুয়ারি, ম্যাজিক জাল, রিং জাল নামেও পরিচিত। ব্যবহারবিধি ও প্রাচুর্য সহজ হওয়ায় টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় জেলেদের পাশাপাশি মৌসুমি মাছ শিকারি এবং সাধারণ মানুষও এর ব্যবহার করেছে। অবৈধ এই জাল ধ্বংসে প্রশাসনিক অভিযান, নজরদারি এবং সচেতনতা বৃদ্ধির উৎসাহী কার্যক্রম যথেষ্ট অপ্রতুল।

জানা যায়, নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি রিং বিশিষ্ট জাল সাধারণত এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতা ও ৬০ থেকে ৯০ ফুট দৈর্ঘ্যের এবং ক্ষুদ্র ফাঁস বিশিষ্ট হয়। এটি লোহার রডের রিং দিয়ে খোপ আকারে বাক্স তৈরি করে চারপাশ সূক্ষ্ম জাল দিয়ে ঘেরাও করে তৈরি।

এ জালে অসংখ্য প্রবেশমুখ থাকায় দুদিক থেকেই মাছ ঢুকতে পারে। জালের ফাঁস ছোট হওয়ায় ছোট কোনো মাছই এর থেকে রেহাই পায় না।

ঘাটাইলে চায়না দুয়ারি রিং জালের ফাঁদে উজাড় হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ যেমন পুঁটি, খলিশা, টাকি, চিংড়ি, ট্যাংরা, শিং, মাগুর, চেলা, ডানকিনা, মলা, ঢেলা, বৈরালী, কাজলী, পাবদা, শোল ইত্যাদি।

এতে ছোট পোনা আটকা পড়ে যা ফেলে দেন শিকারিরা। বিশেষ করে এটাতে ডিমওয়ালা মাছ ধরা পড়ায় স্বাভাবিক প্রজনন, বংশ বিস্তার ও বৃদ্ধি হুমকিতে পড়েছে।

এ ছাড়াও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী বিভিন্ন জলজপ্রাণী যেমন কাঁকড়া, সাপ, কুঁচিয়া, ব্যাঙ, ঝিনুক, শামুক, পোকামাকড়, কচ্ছপ, অণুজীব ইত্যাদির জীবনযাত্রাও এতে তুমুল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

আকার ও মানভেদে একটি চায়না জালের দাম দুই থেকে দশ হাজার টাকা। কম দাম ও সহজলভ্যতার কারণে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে ঘাটাইলের গ্রামাঞ্চলে।

ঘাটাইল উপজেলার হামিদপুর, সাগরদিঘী, গারো বাজার, ধলাপাড়া, পাকুটিয়াসহ বিভিন্ন হাট বাজারে অবাধে বিক্রি এ জালের। এমনকি বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও দূর-দূরান্ত থেকে অনায়াসে গোপনে এই জাল ঢুকে পড়ছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে।

এ দিকে টোক নদী, বংশাই নদী, চাপড়া বিল, দেওপাড়ার গোয়াপচা, গজারিয়া ও রাণাদহ বিল, কামারচালার মাইছা বিল, ধলাপাড়ার কালিয়ান বিল, রসুলপুরের ধলি ও আঠারচূড়া বিল, দিঘলকান্দির শেখশিমুল বিল, চিতাই খাল, নাগবাড়ি বিল, চ্যাংটা খাল, ভেকি টোকের খাল, গৌরাঙ্গী বিল, নেদার বিল, সংগ্রামপুরের মনপুরা এলাকায় শত শত চায়না জাল ব্যবহার করে প্রাকৃতিক মাছ ও জীববৈচিত্র্য অবাধে ধ্বংস করছে।

ঘাটাইল উপজেলার লোকের পাড়া গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের আমিষের চাহিদা পূরণে মাছই একমাত্র উপাদান।

একটা সময়ে নদীনালা, খালবিল, হাওর-বাঁওড়ে দেশীয় মাছের প্রাচুর্য ছিল। চায়না জালের কারণে বাঙালির জৌলুস হারিয়ে যেতে বসেছে।

ধলাপাড়া গ্রামের আজমত আলী বলেন, চায়না জালের প্রভাবে প্রাকৃতিক মাছের প্রাচুর্য কমছে। বিশেষ করে পানি বৃদ্ধি ও মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ এই চায়না জালে নিধন হচ্ছে।

এতে ক্রমেই মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে জলাশয়। এ সব জাল বন্ধ না হলে মৎস্য ভান্ডারে বিপর্যয় নেমে আসার শঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা খাদিজা খাতুন জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও নজরদারি সত্ত্বেও কিছু অসাধু মানুষ অজ্ঞতাবশত এ সব অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছের প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য বাধাগ্রস্ত এবং ধ্বংস করছে।

খোঁজ খবর নিয়ে অবৈধ এই জাল ব্যবহারের প্রকোপ আরও বাড়লে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।