ঢাকা , শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টাঙ্গাইলে জমে উঠেছে দেড় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা

  • ডেস্ক প্রবাহ
  • আপলোডের সময় : ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
  • ৫০৫০ Time View

টাঙ্গাইলে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা শুরু হয়েছে। তিন দিন ব্যাপী এ মেলার শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ছিল প্রথম দিন। উদ্বোধনী দিনেই মেলা জমে উঠেছে। এ মেলার ইতিহাস প্রায় দেড় শত বছর পুরোনো।

এর ধারাবাহিতায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুর গ্রামে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। দূরদূরান্ত থেকে জামাইরা মেলায় এসেছেন।

জানা যায়, মেলাকে সামনে রেখে ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে নানা বিনোদনের ব্যবস্থা। মেলায় এবার বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কসমেটিকস, খাবারের দোকানসহ প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ স্টল বসেছে।

ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় ব্যবসা করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ঈদ বা পূজা-পার্বনের থেকেও উৎসব মুখর ও আনন্দঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ (পঞ্জিকা অনুসারে) টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই মেলার আয়োজন করা হয়।

তিন দিনে রসলপুরসহ আশেপাশের অন্তত ৩০-৩৫ টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে মেলায়।

বিশেষ করে মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার সব মেয়ের জামাই শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসেন। এ কারণেই প্রথম দিন মেলাটি জামাই মেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা দেন শাশুড়িরা।

আর সেই টাকার সঙ্গে আরও টাকা যোগ করে জামাইরা মেলায় গিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয় করেন। পর দিন (দ্বিতীয় দিন) মেলায় বাড়ির বউদের ব্যাপক সমাগম ঘটে।

তারা জামাইসহ আত্মীয়স্বজন নিয়ে আসেন। সে কারণে বউ মেলা হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে। তৃতীয় দিন সব শ্রেণীর লোকজনের আগমনের মধ্যদিয়ে মেলার সমাপ্তি ঘটে।

সরেজমিনে শুক্রবার দেখা যায়, মেলায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। মিষ্টি জাতীয় দোকানের সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

এ ছাড়াও বিনোদনের জন্য নাগর-দোলা, মোটরসাইকেল খেলাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা ছিল। বড়দের পাশাপাশি ছোট ছেলেমেয়েরা এ মেলা উপভোগ করে।

রসুলপুরের বাসিন্দা ও কথাসাহিত্যিক রাশেদ রহমান বলেন, এই মেলার উৎপত্তি কবে সেটা কেউ জানে না। যুগ যুগ ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে। মেলাটি দেড়শ বছরের।

এই এলাকার মানুষের কাছে ঈদ আর পূজাপার্বনের থেকেও এই মেলা বেশি উৎসবের। মেলাটি বৈশাখি মেলা হিসেবে ব্রিটিশ আমলে শুরু হলেও এখন এটি জামাই হিসেবে পরিচিত।

মেলাকে সামনে রেখে রসুলপুর ও এর আশেপাশের বিবাহিত মেয়েরা তাদের বরকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন।

আর মেয়ের জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেবার জন্য শ্বশুর-শাশুড়িরা বেশ আগে থেকেই নেন নানা প্রস্তুতি। মেলার দিন জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন শাশুড়িরা।

আর সেই টাকার সঙ্গে আরও টাকা যোগ করে জামাইরা মেলা থেকে চিড়া, মুড়ি, আঁকড়ি, মিষ্টি, জিলাপিসহ বিভিন্ন জিনিস কিনেন। মেলার দ্বিতীয় দিন বাড়ির বউদের সমাগম বেশি ঘটে।

সুজন নামের এক জামাই জানান, শাশুড়ি দাওয়াত দিয়েছেন। তাই মেলায় এসে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের জন্য ৪০ কেজি মিষ্টি কিনেছি। গত কয়েক বছর ধরে মেলায় এসেছি। অন্য বছরের চেয়ে এবার মেলা জমজমাট বেশি মনে হচ্ছে।

এ দিকে নাগরপুর উপজেলা থেকে আসা নাসির মিয়া নামের এক দর্শনার্থী বলেন, পরিবার নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছি। মেলায় এলে মানুষের সঙ্গে সম্প্রীতি বাড়ে। এমন মেলা সারাদেশেই হোক।

এর মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্প্রীতি বজায় থাকে। এতে আমরা একে অপরের সাথে মিশতে ও দেখা করতে পারি।

স্থানীয় মান্নান বলেন, বহু বছর ধরে আমাদের এখানে মেলা হচ্ছে। মেলা উপলক্ষে জামাইদের দাওয়াত করা হয়। জামাইরা এসে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের জন্য মেলা থেকে অনেক কিছু কিনে নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে মেলা কমিটির আহ্বায়ক ও গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান জানান, এ মেলাটি প্রায় দেড় শত বছরের পুরোনো। এখানে মেলার মূল আকর্ষণ মিষ্টি জাতীয় খাবার। এখানে বিভিন্ন ফানির্চার বিক্রি হয়। এ মেলাটি জেলার সব চেয়ে বড় মেলা।

তিনি আরও বলেন, মেলায় প্রায় ছোট বড় মিলিয়ে ৩ শতাধিক দোকান বসেছে। মেলা শুরু হওয়ার আগেই গ্রামের জামাই ও বউয়েরা আসেন। তারা বিভিন্নভাবে মেলা উপভোগ করে থাকেন।

এ ছাড়াও মেলায় টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসেন। মেলা উপলক্ষে আমাদের প্রায় দেড় শতাধিক লোক ভলানটিয়ার হিসেবে কাজ করছেন। আমরা দোকানদারকে সার্বিক সহযোগিতা করছি।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

টাঙ্গাইলে জমে উঠেছে দেড় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা

আপলোডের সময় : ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

টাঙ্গাইলে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা শুরু হয়েছে। তিন দিন ব্যাপী এ মেলার শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ছিল প্রথম দিন। উদ্বোধনী দিনেই মেলা জমে উঠেছে। এ মেলার ইতিহাস প্রায় দেড় শত বছর পুরোনো।

এর ধারাবাহিতায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুর গ্রামে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। দূরদূরান্ত থেকে জামাইরা মেলায় এসেছেন।

জানা যায়, মেলাকে সামনে রেখে ছোট ছেলে-মেয়েদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে নানা বিনোদনের ব্যবস্থা। মেলায় এবার বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কসমেটিকস, খাবারের দোকানসহ প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ স্টল বসেছে।

ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় ব্যবসা করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ঈদ বা পূজা-পার্বনের থেকেও উৎসব মুখর ও আনন্দঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ (পঞ্জিকা অনুসারে) টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই মেলার আয়োজন করা হয়।

তিন দিনে রসলপুরসহ আশেপাশের অন্তত ৩০-৩৫ টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে মেলায়।

বিশেষ করে মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার সব মেয়ের জামাই শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসেন। এ কারণেই প্রথম দিন মেলাটি জামাই মেলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা দেন শাশুড়িরা।

আর সেই টাকার সঙ্গে আরও টাকা যোগ করে জামাইরা মেলায় গিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র ক্রয় করেন। পর দিন (দ্বিতীয় দিন) মেলায় বাড়ির বউদের ব্যাপক সমাগম ঘটে।

তারা জামাইসহ আত্মীয়স্বজন নিয়ে আসেন। সে কারণে বউ মেলা হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে। তৃতীয় দিন সব শ্রেণীর লোকজনের আগমনের মধ্যদিয়ে মেলার সমাপ্তি ঘটে।

সরেজমিনে শুক্রবার দেখা যায়, মেলায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। মিষ্টি জাতীয় দোকানের সংখ্যা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

এ ছাড়াও বিনোদনের জন্য নাগর-দোলা, মোটরসাইকেল খেলাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা ছিল। বড়দের পাশাপাশি ছোট ছেলেমেয়েরা এ মেলা উপভোগ করে।

রসুলপুরের বাসিন্দা ও কথাসাহিত্যিক রাশেদ রহমান বলেন, এই মেলার উৎপত্তি কবে সেটা কেউ জানে না। যুগ যুগ ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে। মেলাটি দেড়শ বছরের।

এই এলাকার মানুষের কাছে ঈদ আর পূজাপার্বনের থেকেও এই মেলা বেশি উৎসবের। মেলাটি বৈশাখি মেলা হিসেবে ব্রিটিশ আমলে শুরু হলেও এখন এটি জামাই হিসেবে পরিচিত।

মেলাকে সামনে রেখে রসুলপুর ও এর আশেপাশের বিবাহিত মেয়েরা তাদের বরকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন।

আর মেয়ের জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেবার জন্য শ্বশুর-শাশুড়িরা বেশ আগে থেকেই নেন নানা প্রস্তুতি। মেলার দিন জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন শাশুড়িরা।

আর সেই টাকার সঙ্গে আরও টাকা যোগ করে জামাইরা মেলা থেকে চিড়া, মুড়ি, আঁকড়ি, মিষ্টি, জিলাপিসহ বিভিন্ন জিনিস কিনেন। মেলার দ্বিতীয় দিন বাড়ির বউদের সমাগম বেশি ঘটে।

সুজন নামের এক জামাই জানান, শাশুড়ি দাওয়াত দিয়েছেন। তাই মেলায় এসে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের জন্য ৪০ কেজি মিষ্টি কিনেছি। গত কয়েক বছর ধরে মেলায় এসেছি। অন্য বছরের চেয়ে এবার মেলা জমজমাট বেশি মনে হচ্ছে।

এ দিকে নাগরপুর উপজেলা থেকে আসা নাসির মিয়া নামের এক দর্শনার্থী বলেন, পরিবার নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছি। মেলায় এলে মানুষের সঙ্গে সম্প্রীতি বাড়ে। এমন মেলা সারাদেশেই হোক।

এর মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্প্রীতি বজায় থাকে। এতে আমরা একে অপরের সাথে মিশতে ও দেখা করতে পারি।

স্থানীয় মান্নান বলেন, বহু বছর ধরে আমাদের এখানে মেলা হচ্ছে। মেলা উপলক্ষে জামাইদের দাওয়াত করা হয়। জামাইরা এসে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের জন্য মেলা থেকে অনেক কিছু কিনে নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে মেলা কমিটির আহ্বায়ক ও গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান জানান, এ মেলাটি প্রায় দেড় শত বছরের পুরোনো। এখানে মেলার মূল আকর্ষণ মিষ্টি জাতীয় খাবার। এখানে বিভিন্ন ফানির্চার বিক্রি হয়। এ মেলাটি জেলার সব চেয়ে বড় মেলা।

তিনি আরও বলেন, মেলায় প্রায় ছোট বড় মিলিয়ে ৩ শতাধিক দোকান বসেছে। মেলা শুরু হওয়ার আগেই গ্রামের জামাই ও বউয়েরা আসেন। তারা বিভিন্নভাবে মেলা উপভোগ করে থাকেন।

এ ছাড়াও মেলায় টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসেন। মেলা উপলক্ষে আমাদের প্রায় দেড় শতাধিক লোক ভলানটিয়ার হিসেবে কাজ করছেন। আমরা দোকানদারকে সার্বিক সহযোগিতা করছি।