ঢাকা , শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে রেকর্ড

  • ডেস্ক প্রবাহ
  • আপলোডের সময় : ০৩:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
  • ৫০২৯ Time View

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম পৌঁছেছে নতুন রেকর্ড উচ্চতায়। বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার প্রতি আগ্রহ বাড়াচ্ছেন।

এরই প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতনামা বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইউবিএস এবং কমার্জব্যাংক তাদের মূল্য পূর্বাভাস বলেছে, চলতি বছর স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। খবর খালিজ টাইমস

বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া বাণিজ্য নীতিমালা এর মূল কারণ। চীনের উপর শুল্ক ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যার পাল্টা জবাবে বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই পরিস্থিতি বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে এবং মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা জোরালো হয়েছে।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ৩ হাজার ২০০ ডলার অতিক্রম করেছে। দিনের মধ্যভাগে স্পট গোল্ড ১.৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২১৭.১৫ ডলারে, যেখানে এর কিছু সময় আগেই এটি পৌঁছায় রেকর্ড ৩ হাজার ২৩৭.৫৬ ডলারে।

সপ্তাহজুড়ে স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ এবং চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। মার্কিন গোল্ড ফিউচারসও ১.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছেছে প্রতি আউন্স ৩ হাজার ২৩৪.৯০ ডলারে।

ইউবিএস তাদের গবেষণা নোটে জানায়, আমরা আশা করছি স্বর্ণের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা আগামী বছরেও অব্যাহত থাকবে এবং উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল হবে। প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের মধ্যেই স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৫০০ ডলার ছুঁতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।

কমার্জব্যাংকও ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ স্বর্ণের মূল্য ৩ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে। তারা উল্লেখ করে, মার্চ মাস শেষে গোল্ড এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) ব্যবস্থাপনার অধীনে থাকা মোট সম্পদের পরিমাণ রেকর্ড ৩৪৫.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

স্বর্ণের দামের এই ঊর্ধ্বগতির আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সক্রিয় স্বর্ণ কেনা। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক টানা পাঁচ মাস ধরে স্বর্ণ ক্রয় করেছে। মার্চ মাসের শেষে দেশটির স্বর্ণের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৭৩.৭ মিলিয়ন ফাইন ট্রয় আউন্স, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৭৩.৬১ মিলিয়ন আউন্স।

এই সপ্তাহেই ডয়েচে ব্যাংক তাদের ২০২৫ ও ২০২৬ সালের স্বর্ণের গড় দাম পূর্বাভাস সংশোধন করে যথাক্রমে ৩ হাজার ১৩৯ এবং ৩ হাজার ৭০০ ডলার নির্ধারণ করেছে।

বিশ্বজুড়ে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা ও আর্থিক অনিশ্চয়তার মাঝে স্বর্ণ আবারও প্রমাণ করেছে, এটি বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ এবং লাভজনক আশ্রয়স্থল হিসেবে টিকে আছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় খবর

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে রেকর্ড

আপলোডের সময় : ০৩:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম পৌঁছেছে নতুন রেকর্ড উচ্চতায়। বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার প্রতি আগ্রহ বাড়াচ্ছেন।

এরই প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতনামা বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইউবিএস এবং কমার্জব্যাংক তাদের মূল্য পূর্বাভাস বলেছে, চলতি বছর স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ৩ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। খবর খালিজ টাইমস

বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া বাণিজ্য নীতিমালা এর মূল কারণ। চীনের উপর শুল্ক ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যার পাল্টা জবাবে বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই পরিস্থিতি বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে এবং মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা জোরালো হয়েছে।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ৩ হাজার ২০০ ডলার অতিক্রম করেছে। দিনের মধ্যভাগে স্পট গোল্ড ১.৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২১৭.১৫ ডলারে, যেখানে এর কিছু সময় আগেই এটি পৌঁছায় রেকর্ড ৩ হাজার ২৩৭.৫৬ ডলারে।

সপ্তাহজুড়ে স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ এবং চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। মার্কিন গোল্ড ফিউচারসও ১.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে পৌঁছেছে প্রতি আউন্স ৩ হাজার ২৩৪.৯০ ডলারে।

ইউবিএস তাদের গবেষণা নোটে জানায়, আমরা আশা করছি স্বর্ণের এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা আগামী বছরেও অব্যাহত থাকবে এবং উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল হবে। প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের মধ্যেই স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৫০০ ডলার ছুঁতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।

কমার্জব্যাংকও ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ স্বর্ণের মূল্য ৩ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে। তারা উল্লেখ করে, মার্চ মাস শেষে গোল্ড এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) ব্যবস্থাপনার অধীনে থাকা মোট সম্পদের পরিমাণ রেকর্ড ৩৪৫.৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

স্বর্ণের দামের এই ঊর্ধ্বগতির আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সক্রিয় স্বর্ণ কেনা। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক টানা পাঁচ মাস ধরে স্বর্ণ ক্রয় করেছে। মার্চ মাসের শেষে দেশটির স্বর্ণের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৭৩.৭ মিলিয়ন ফাইন ট্রয় আউন্স, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৭৩.৬১ মিলিয়ন আউন্স।

এই সপ্তাহেই ডয়েচে ব্যাংক তাদের ২০২৫ ও ২০২৬ সালের স্বর্ণের গড় দাম পূর্বাভাস সংশোধন করে যথাক্রমে ৩ হাজার ১৩৯ এবং ৩ হাজার ৭০০ ডলার নির্ধারণ করেছে।

বিশ্বজুড়ে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা ও আর্থিক অনিশ্চয়তার মাঝে স্বর্ণ আবারও প্রমাণ করেছে, এটি বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ এবং লাভজনক আশ্রয়স্থল হিসেবে টিকে আছে।