ঢাকা , শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঘাটাইলে বাণিজ্যিক ভাবে বিদেশী সবজি সায়োট চাষ

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার খুপিবাড়ী গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা হাফিজুর রহমান ল্যাটিন আমেরিকান সবজি জাতীয় ফল সায়োট চাষে সফল হয়েছেন। সবজিটি এখন বানিজ্যিকভাবে চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে, সায়োট ল্যাটিন আমেরিকান উন্নতমানের সবজি জাতীয় ফল। সবজিটি চও চও নামেও পরিচিত। স্বাদে অনেকটা পেঁপের মতো। কাঁচা ও পাকা দুই রকম ভাবেই খাওয়া যায়। সায়োটের বৈজ্ঞানিক নাম সিচিয়াম ই্যডুল। আদি নিবাস মেক্সিকো।

তবে ব্রাজিল কোষ্টারিকা, গুয়েতমালা ও হন্ডুরাসে এর প্রচুর আবাদ হয়। সায়োটের আকার নাশপাতির মতো। পুষ্টিগুণে ভরপুর সায়োটে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।

গ্যাষ্ট্রিক, আলসার, ক্যান্সার, হৃদরোগ, লিভার এবং ডায়াবেটিসে বেশ উপকারি। বানিজ্যিক ভিত্তিতে সায়োটের আবাদ হলে তা লাভজনক হবে ।

সবজি জাতীয় এই ফলটি ভেজে, সিদ্ধ করে, তরকারি রান্না করে, ক্রিম বা চাটনি রুপে নানা রেসিপিতে খাওয়া যায়। এর শেকড়, বীজ, কান্ড ও পাতা কিছুই ফেলনা নয়।

গাছ লাগানোর তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফল আসা শুরু হয়। লাউ গাছের মতো নুইয়ে চলে বলে মাঁচা বানিয়ে দিতে হয়।

হাফিজুর রহমানা জানান, দীর্ঘ দিন একটি বিদেশী জাহাজ কোম্পানিতে চাকরিকালে পৃথিবীর বহু দেশের বন্দরে এবং পর্যটন সমৃদ্ধ এলাকায় সায়োট ফলের বিভিন্ন রেসেপির স্বাদ নিয়েছেন।

তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল দেশে ফিরে আসার পর বাড়িতে সায়োটের আবাদ করবেন।

এরই মধ্যে গত বছর ভারতের দার্জিলিং বেড়াতে গিয়ে সেখানকার টুরিষ্ট জোন এলাকায় তিনি সায়োট আবাদ হতে দেখতে পান। সায়োট আবাদের স্বপ্ন পূরন করতে সেখান থেকে তিনি কিছু সায়োট বীজ সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে আসেন।

সেই বীজ তিনি বাড়ির পুকুর পাড়ে রোপন করেন। সেখান থেকে চারাও গজায়। লাগানোর তিন মাস পর বেশ কয়েকটি গাছে থোকা থোকা ফল আসা শুরু করে। দেড় মাস ধরে সেসব গাছ থেকে ফল আহরণ করা হচ্ছে।

আরো তিন মাস ফল সংগ্রহ করার আশা করছেন। এই ফল এখন তিনি নিজে খাচ্ছেন। পাড়া পড়শিদের মধ্যে বিতরণ করছেন।

কিছু বিক্রিও করেছেন ফলণ সন্তোষজনক হওয়ায় আগামী বছর বানিজ্যিক ভিত্তিতে সায়োটের আবাদ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। বাড়ির ছাদ বাগানেও এটি আবাদ করা যায় বলে তিনি জানান ।

ঘাটাইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন জানান, এটি খুব উন্নত মানের পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল জাতীয় সবজি। কৃষি বিভাগের তত্বাবধানে হাফিজুর রহমান পরীক্ষামূলক ভাবে এবার আবাদ করেছেন। এটি একদম নতুন ফল বা সবজি।

প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে সায়োটের ফলণ খুবই আশাপ্রদ। পোকামাকড় বা রোগবালাইয়ের বাড়তি উপদ্রব নেই। বানিজ্যিক ভিত্তিতে সায়োটের আবাদ হলে তা লাভজনক হবে ।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ঘাটাইলে বাণিজ্যিক ভাবে বিদেশী সবজি সায়োট চাষ

আপলোডের সময় : ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার খুপিবাড়ী গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা হাফিজুর রহমান ল্যাটিন আমেরিকান সবজি জাতীয় ফল সায়োট চাষে সফল হয়েছেন। সবজিটি এখন বানিজ্যিকভাবে চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে, সায়োট ল্যাটিন আমেরিকান উন্নতমানের সবজি জাতীয় ফল। সবজিটি চও চও নামেও পরিচিত। স্বাদে অনেকটা পেঁপের মতো। কাঁচা ও পাকা দুই রকম ভাবেই খাওয়া যায়। সায়োটের বৈজ্ঞানিক নাম সিচিয়াম ই্যডুল। আদি নিবাস মেক্সিকো।

তবে ব্রাজিল কোষ্টারিকা, গুয়েতমালা ও হন্ডুরাসে এর প্রচুর আবাদ হয়। সায়োটের আকার নাশপাতির মতো। পুষ্টিগুণে ভরপুর সায়োটে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।

গ্যাষ্ট্রিক, আলসার, ক্যান্সার, হৃদরোগ, লিভার এবং ডায়াবেটিসে বেশ উপকারি। বানিজ্যিক ভিত্তিতে সায়োটের আবাদ হলে তা লাভজনক হবে ।

সবজি জাতীয় এই ফলটি ভেজে, সিদ্ধ করে, তরকারি রান্না করে, ক্রিম বা চাটনি রুপে নানা রেসিপিতে খাওয়া যায়। এর শেকড়, বীজ, কান্ড ও পাতা কিছুই ফেলনা নয়।

গাছ লাগানোর তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফল আসা শুরু হয়। লাউ গাছের মতো নুইয়ে চলে বলে মাঁচা বানিয়ে দিতে হয়।

হাফিজুর রহমানা জানান, দীর্ঘ দিন একটি বিদেশী জাহাজ কোম্পানিতে চাকরিকালে পৃথিবীর বহু দেশের বন্দরে এবং পর্যটন সমৃদ্ধ এলাকায় সায়োট ফলের বিভিন্ন রেসেপির স্বাদ নিয়েছেন।

তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল দেশে ফিরে আসার পর বাড়িতে সায়োটের আবাদ করবেন।

এরই মধ্যে গত বছর ভারতের দার্জিলিং বেড়াতে গিয়ে সেখানকার টুরিষ্ট জোন এলাকায় তিনি সায়োট আবাদ হতে দেখতে পান। সায়োট আবাদের স্বপ্ন পূরন করতে সেখান থেকে তিনি কিছু সায়োট বীজ সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে আসেন।

সেই বীজ তিনি বাড়ির পুকুর পাড়ে রোপন করেন। সেখান থেকে চারাও গজায়। লাগানোর তিন মাস পর বেশ কয়েকটি গাছে থোকা থোকা ফল আসা শুরু করে। দেড় মাস ধরে সেসব গাছ থেকে ফল আহরণ করা হচ্ছে।

আরো তিন মাস ফল সংগ্রহ করার আশা করছেন। এই ফল এখন তিনি নিজে খাচ্ছেন। পাড়া পড়শিদের মধ্যে বিতরণ করছেন।

কিছু বিক্রিও করেছেন ফলণ সন্তোষজনক হওয়ায় আগামী বছর বানিজ্যিক ভিত্তিতে সায়োটের আবাদ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। বাড়ির ছাদ বাগানেও এটি আবাদ করা যায় বলে তিনি জানান ।

ঘাটাইল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন জানান, এটি খুব উন্নত মানের পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল জাতীয় সবজি। কৃষি বিভাগের তত্বাবধানে হাফিজুর রহমান পরীক্ষামূলক ভাবে এবার আবাদ করেছেন। এটি একদম নতুন ফল বা সবজি।

প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে সায়োটের ফলণ খুবই আশাপ্রদ। পোকামাকড় বা রোগবালাইয়ের বাড়তি উপদ্রব নেই। বানিজ্যিক ভিত্তিতে সায়োটের আবাদ হলে তা লাভজনক হবে ।